স্বদেশ প্রেম রচনা PDF Download

প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা আপনি যদি স্বদেশ প্রেম রচনাটির PDF খুজেঁ থাকেন অফলাইনে বসে পড়ার জন্য তাহলে এই পোস্টটিই আপনার জন্য। আমি বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যবই থেকে যেগুলো সহজ ও ভালো মনে হয়েছে এরকম ৪ টি রচনা নিয়ে একটা পিডিএফ বই তৈরী করেছি। আপনি যে শ্রেনীতেই পড়েন না কেনো এটি আপনার জন্য উপযোগী হবেই কারন এখানে ৩৫০-১৫০০ ওয়ার্ডের মধ্যে রচনাগুলি রয়েছে।

স্বদেশ প্রেম রচনা পিডিএফ টি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিনঃ

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮ টি
পিডিএফ সাইজঃ ৫ মেগাবাইট
ডাউনলোড লিংকঃ গুগল ড্রাইভ
ক্যাটেগরিঃ ইডুকেশনাল, রচনা
কোন শ্রেণীর জন্যঃ ২য় শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য।

স্বদেশ প্রেম রচনা PDF Download

Download Now

চারটি রচনা থেকে ১টি এখানে দিয়ে দিলাম পড়ে দেখতে পারেন।

                  স্বদেশ প্রেম রচনা

ভূমিকাঃ

 যে দেশ আলো দিল, মুখে দিল অন্নজল, দিল পরনের বস্ত্র, তার প্রতি যদি সেই দেশের শ্যামলস্নেহে প্রতিপালিত সন্তানদের ভালোবাসা না থাকে, তবে তারা কেবল অকৃতজ্ঞই নয়— অধম। স্বদেশের মানুষ, স্বদেশের রূপ-প্রকৃতি, তার পশুপাখি, প্রতিটি ধূলিকণা তার সন্তানদের কাছে প্রিয়, পরম পবিত্র।

 দেশমাতৃকার মৃন্ময়ী মূর্তি কেবল কাদা-মাটি-জলে নির্মিত প্রতিমা মাত্রই নয়, হৃদয়ের নিবিড় ভালোবাসায় এবং গভীর মমত্ববোধে সে সন্তানের অন্তরের অন্তঃস্থলে পরিগ্রহ করে চির আরাধ্য চিন্ময়ী মূর্তি। স্বদেশের কাছে মানুষ সকল দিক দিয়েই ঋণী। স্বদেশপ্রেম সেই ঋণ-স্বীকার ও ঋণ শোধের উপায়মাত্র।

স্বদেশপ্রেম কিঃ

 যে ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং বড় হয়ে ওঠে; তার প্রতি, সেখানকার মানুষের প্রতি তার একটা স্বাভাবিক আন্তর আকর্ষণ গড়ে ওঠে। স্বদেশের পশুপাখি, তরুলতা থেকে শুরু করে তার প্রতিটি ধূলিকণা পর্যন্ত তার পরম কামনার ধন।

সে তখন আবেগবিহ্বল কণ্ঠে গেয়ে ওঠে— “আমার এই দেশেতেই জন্ম যেন এই দেশেতেই মরি।” দেশের প্রতি এই আজন্ম আকর্ষণ থেকেই স্বদেশপ্রেমের উন্মেষ। তখন মানুষ উপলব্ধি করে, ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।' কবি গোবিন্দচন্দ্র দাস বলেছেন—

   “জননী গো জন্মভূমি তোমারি পবন
  দিতেছে জীবন মোরে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।
    সুন্দর শশাঙ্কমুখ, উজ্জ্বল তপন,
 হেরেছি প্রথমে আমি তোমারি আকাশে।
 ত্যাজিয়ে মায়ের কোল, তোমারি কোলেতে
 শিখিয়াছি ধূলি-খেলা, তোমারি ধূলিতে।”

স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশঃ

স্বদেশপ্রেম মানুষের অন্তরে কখনো থাকে সুপ্ত, কখনো জাগ্রত। কিন্তু স্বদেশপ্রেমের মূল গ্রোথিত থাকে অন্তরের অন্তস্থলে। ঐক্যবদ্ধভাবে যখন দেশের সকল মানুষ একই জীবনধারায়, একই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারায় পুষ্ট হয়ে একই আদর্শের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে, তখনই মৃন্ময়ী দেশ হয়ে ওঠে চিন্ময়ী।

‘ফুলে ও ফসলে, কাদা-মাটি-জলে' দেশ তখন যথার্থ মাতৃভূমি হয়ে ওঠে। স্বর্গাদপি গরীয়সী জননী জন্মভূমিকে তখন সবাই সালাম দেয়; সুজলা-সুফলা, মলয়জ শীতলা, শস্য শ্যামলা দেশের তখন অভিষেক হয় জননীরূপে। মহাকবি কায়কোবাদ তাঁর 'বাংলা আমার' কবিতায় লিখেছেনঃ

“বাংলা আমার ----------- বাংলা আমার
বাংলা আমার --------------জন্মভূমি
গঙ্গা ও যমুনা------------- পদ্মা ও মেঘনা
           বহিছে যাহার চরণ চুমি।”

স্বদেশপ্রেমের উন্মেষঃ

 সুখের দিনে স্বদেশপ্রেম থাকে সুপ্তিময়। কিন্তু দুঃখের দিনে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে স্বদেশপ্রেমের হয় শুভ উদ্বোধন। পরাধীনতার দুঃখ-বেদনায়, পরদেশীয় অকথ্য নির্যাতনে অন্তরের সুপ্ত স্বদেশপ্রেমের ঘুম ভাঙে।

কিংবা দেশ যখন বিদেশি শত্রুর আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়, তখন সমগ্র জাতি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বদেশের লাঞ্ছনা মোচন ও মর্যাদা রক্ষাকল্পে প্রাণ দেবার জন্য দলে দলে ছুটে যায়। তখন মনে হয়, “নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।"

দেশ-দেশান্তরের ইতিহাসই তার সাক্ষী। দলে দলে প্রাণ বিসর্জন দিতে গিয়ে কোনো কোনো দেশ হয়েছে অবীরা এবং মহিলারা জহরব্রত অনুষ্ঠান করে কিংবা জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করে রেখে গেছে স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপঃ

 দেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্ভ্রমবোধ থেকে। যে জাতির আত্মসম্ভ্রমবোধ যত প্রখর, সে জাতির স্বদেশপ্রেম তত প্রবল। স্বদেশপ্রেম এক প্রকার পরিশুদ্ধ ভাবাবেগ। নিঃস্বার্থ, হিংসাবিহীন দেশপ্রেমই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম।

 ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে যখন মন পরিচালিত হয়, যখন আত্মকল্যাণের চেয়ে বৃহত্তর কল্যাণবোধ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখনই জ্বলে ওঠে স্বদেশপ্রেমের নিষ্কলুষ প্রদীপশিখা। স্বদেশের মান-মর্যাদা এবং তার গৌরব রক্ষাকল্পে শহিদ হয়েছে কত অমর প্রাণ।

দেশসেবার পথে বাধা, বিস্তর, অত্যাচার সীমাহীন। কিন্তু পরদেশী শাসকের রক্তচক্ষু, উদ্যত অস্ত্র কিংবা পথের কোন বাধা তাঁদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপকে নিবৃত্ত করতে পারে না। তাঁরা মৃত্যু-ভয়কে তুচ্ছ করে এগিয়ে যায় দেশমাতৃকার ভালোবাসার টানে। তাই কবি রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় লিখেছেনঃ
     
       “স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
                      কে বাঁচিতে চায়?
       দাসত্ব শৃঙ্খল বল, কে পরিবে পায় হে
                     কে পরিবে পায়?”

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্তঃ

 স্বদেশকে ভালোবাসতে গিয়ে যুগে যুগে বহু নেতা ও মনীষী নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। উপমহাদেশের তিতুমীর, রানা প্রতাপ, শিবাজী, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্লচাকী, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

 বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ মোঃ রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, মোস্তফা কামাল, মুন্সী আবদুর রব, নূর মোহাম্মদ শেখ, হামিদুর রহমান প্রমুখ অকাতরে জীবন দিয়ে দৈশপ্রেমের দৃষ্টান্ত হিসেবে অমর হয়ে আছেন।

এছাড়া শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, ভ.ই. লেনিন, মাও সেতুং, গ্যারিবন্ডি, জর্জ ওয়াশিংটন, কামাল পাশা, হো. চি. মিন, সাদ্দাম হোসেন, মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

অন্ধ স্বদেশপ্রেমঃ

 স্বদেশপ্রেম দেশ ও জাতির গৌরবের বস্তু। কিন্তু অন্ধ স্বদেশপ্রেম ধারণ করে ভয়ঙ্কর রূপ, তা জাতিতে জাতিতে অনিবার্য করে তোলে সংঘাত ও সংঘর্ষ। অন্ধ স্বদেশপ্রেম কেবল স্বদেশের কথাই চিন্তা করে। আবার স্বদেশের জয়গান যদি অপরের স্বদেশপ্রেমকে আহত করে, তবে সেই অন্ধ স্বদেশপ্রেম বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে ডেকে আনে ভয়াবহ রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব-সংঘাত।

মানুষের বক্ষ-ক্ষরিত রক্ত-পিচ্ছিল পথে চলতে থাকে উগ্র দেশপ্রেমের নৃশংস অভিযান। হিটলারের জার্মানি এবং মুসোলিনীর ইতালি উগ্র জাতীয়তার সেই নগ্ন বীভৎস প্রকাশের মধ্যদিয়ে সেদিন বিশ্বমানবতার বক্ষে পদস্থাপনে উদ্যত হয়েছিল।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমঃ

স্বদেশপ্রেমের সঙ্গে বিশ্বপ্রেমের কোন অমিল নেই, কোনো সংঘাত নেই। স্বদেশপ্রেম তো বিশ্বপ্রেমেরই সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। বলাবাহুল্য, স্বদেশ বিশ্বেরই অন্তর্ভুক্ত। স্বদেশের মধ্যস্থতায় বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে।

আমরা স্বদেশকে ভালোবেসে তার পদমূলে যে ভক্তিপূত শ্রদ্ধা নিবেদন করি, তা গিয়ে পৌঁছায় বিশ্ব স্রষ্টারই পদতলে। কাজেই বলা যায়, স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই প্রথম সোপান। স্বদেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে আমরা বিশ্বপ্রেমের জগতে উপনীত হতে পারি।

স্বদেশবাসীকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে পারলে আমরা বিশ্ববাসীকেও মনে প্রাণে ভালোবাসতে পারি। আবার যে স্বদেশবাসী, সে বিশ্ববাসীও বটে। স্বদেশের নদী নির্ঝর, বন-উপবন, গিরি-পর্বত, তার মানুষ এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিশ্বেরও মহা সম্পদ। কাজেই, স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের উৎস এক ও অভিন্ন। তাদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে সম্পর্কঃ

 বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মতে, জাতীয়তা ও স্বদেশপ্রেম যখন সংকীর্ণতার অন্ধকূপে বন্দি হয়ে উগ্র ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করে, তখন বিশ্বপ্রেম পদদলিত হয়। স্বদেশকে একমাত্র পরম প্রিয় মনে করে আমরা বিশ্বকে শত্রু মনে করি এবং তাকে ধ্বংস করবার জন্য ধাবিত হই।

তখন শুভ বিচার-বুদ্ধি স্বদেশপ্রেমের অন্ধ আবেগে লুপ্ত হয়। ফলে 'পরস্পর হানাহানি এবং অবারিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অনিবার্যরূপে দেখা দেয়। আর নানা মারণাস্ত্র আবিষ্করণের ফলে সেই হানাহানি অচিরেই ধারণ করে চরম বিভীষিকাময় রূপ । বিশ শতকে সংঘটিত দু'দুটি বিশ্বযুদ্ধ সেই উগ্র জাতীয়তাবাদেরই নির্মম ফলশ্রুতি।

 কাজেই উগ্র জাতীয়তাবোধে কল্যাণ নেই, নেই বাঞ্ছিত জাতীয় সমৃদ্ধি। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন.......
   “ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা,
    তোমাতে বিশ্বময়ীর- তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।”

দেশজননী ও বিশ্বজননী এক ও অভিন্ন। কারণ, দেশজননীর বুকের ওপর বিশ্বজননীরও আঁচল পাতা। স্বদেশ এবং বিশ্ব আমাদের ঐক্য চেতনার
এপিঠ আর ওপিঠ।

স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্যঃ

 স্বদেশপ্রেম মানবচরিত্রের এক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ যেমন দেশপ্রেমের পরিচয় বহন করে, তেমনি সাহিত্য, শিল্পকলা বা অন্যান্য জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে কাজ করাও দেশপ্রেমের লক্ষণ।

তাই প্রত্যেকের কাজ হবে যার যার ক্ষেত্রে দেশের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন করা যাতে স্বদেশের সবরকম উন্নতি সাধিত হয়। দেশপ্রেম নিজের দেশকে জানতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়। স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমেই বিশ্বপ্রেমে এগিয়ে যাওয়া যায়। ফলে মানবতার মহান আদর্শের সম্প্রসারণ ঘটে।

উপসংহারঃ

স্বদেশপ্রেম মানুষের সহজাত মহৎ প্রবৃত্তি। যথার্থ দেশপ্রেমিক দেশের স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থাপন করেন না নিজের স্বার্থকে। দেশের স্বার্থে সহাস্যে আত্মবলিদান করতে পারেন তিনি।

গ্যারিবল্ডী, লেনিন, সুভাষ বসু, রানা প্রতাপ, চাঁদ সুলতানা, ওয়াশিংটন, জোয়ান অব আর্ক, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠগণ সেরকম দেশপ্রেমিক।
আমাদের সকলকে স্বার্থহীন দেশপ্রেমিক হতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে স্বদেশপ্রেমকে। তবেই স্বাধীন জাতির মর্যাদা নিয়ে আনন্দের সাথে বেঁচে থাকা যাবে।

আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত হতে follow বাটনে ক্লিক করুন